স্বামী বিবেকানন্দ: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয়
স্বামী বিবেকানন্দ, ভারতের অন্যতম শ্রদ্ধেয় আধ্যাত্মিক নেতা, নারেন্দ্রনাথ দত্ত নামে জন্মগ্রহণ করেন ১২ জানুয়ারি, ১৮৬৩ সালে কলকাতায়। তাঁর গভীর জ্ঞান, বাগ্মিতা এবং আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি তাঁকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দেয়। তিনি ভারতীয় দর্শন, বিশেষত বেদান্ত ও যোগের শিক্ষা পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিত করান এবং ভারতে জাতীয় গর্ব ও ঐক্যের অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলেন।
প্রারম্ভিক জীবন
একটি প্রগতিশীল ও বুদ্ধিজীবী পরিবারে জন্ম নেওয়া বিবেকানন্দ শৈশব থেকেই অসাধারণ মেধা ও কৌতূহল প্রদর্শন করেন। তিনি পড়াশোনায় অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ ছিলেন এবং দর্শন, ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি গভীর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। আধ্যাত্মিক সত্যের সন্ধান তাঁকে তাঁর গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংস-এর সাথে পরিচিত করায়। রামকৃষ্ণ তাঁকে সর্বজনীন ঐক্য ও আত্মসাক্ষাতের ধারণা প্রদান করেন।
কর্মজীবন ও কৃতিত্ব
রামকৃষ্ণের মৃত্যুপরবর্তী ১৮৮৬ সালে বিবেকানন্দ সন্ন্যাস গ্রহণ করেন এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেন, দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা বোঝার জন্য। এই ভ্রমণ তাঁর জনকল্যাণ, শিক্ষা, স্বনির্ভরতা ও আধ্যাত্মিক জাগরণের স্বপ্নকে গঠন করে।
১৮৯৩ সালে তিনি শিকাগোতে বিশ্ব ধর্ম মহাসভা-তে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর বিখ্যাত বক্তব্য, "আমেরিকার ভগ্নি ও ভ্রাতৃগণ," উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে এবং তাঁকে আন্তর্জাতিক আধ্যাত্মিক নেতার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি ধর্মের সহনশীলতা, ঐক্য এবং সম্প্রীতির সর্বজনীন বার্তা প্রচার করেন।
১৮৯৭ সালে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা সামাজিক সেবা, শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক উন্নতিতে নিবেদিত। তিনি বেলুড় মঠও প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে বেদান্ত ও তাঁর গুরুর শিক্ষার প্রচার চালানো হয়।
উত্তরাধিকার
স্বামী বিবেকানন্দ ৪ জুলাই, ১৯০২ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। যদিও তাঁর জীবন সংক্ষিপ্ত ছিল, তাঁর আধ্যাত্মিক চিন্তা, শিক্ষা এবং জাতীয় চেতনার প্রতি অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। তাঁর জন্মদিন ১২ জানুয়ারি ভারতে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়, যা যুবসমাজকে তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত করার জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে।
তাঁর শিক্ষাগুলি আজও সারা বিশ্বে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, আত্মসাক্ষাতের জন্য চেষ্টা করতে এবং মানবজাতির কল্যাণে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে।
Comments
Post a Comment