জামাই ষষ্ঠী: উৎসবের তাৎপর্য ও পশ্চিমবঙ্গে উদযাপন
🌸 জামাই ষষ্ঠী: উৎসবের তাৎপর্য ও পশ্চিমবঙ্গে উদযাপন
✅ উৎসবের তাৎপর্য
জামাই ষষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গের এক বিশেষ পারিবারিক উৎসব, যা জামাই বা পুত্রবধূর স্বামীকে ঘিরে পালিত হয়। শাশুড়ি তার জামাইয়ের দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির জন্য ষষ্ঠী দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। এটি বাঙালি সমাজে শ্বশুরবাড়ি ও জামাইয়ের সম্পর্ককে মজবুত করার প্রতীক, যেখানে জামাইকে সাদর অভ্যর্থনা, স্নেহ ও খাতির করা হয়।
উৎসবটি জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল ষষ্ঠী তিথিতে হয়, অর্থাৎ নতুন চাঁদের পর ষষ্ঠ দিনে। ষষ্ঠী দেবী মূলত সন্তানদের রক্ষাকর্ত্রী ও মাতৃত্বের দেবী হিসেবে পূজিত হন, এবং এই দিনে পরিবারের মঙ্গল কামনায় বিশেষ পূজা হয়। জামাই ষষ্ঠী তাই শুধু জামাইয়ের ব্যক্তিগত উৎসব নয়, বরং পরিবারের একতা, ঐতিহ্য ও বন্ধনের উৎসবও বটে।
🎉 পশ্চিমবঙ্গে কীভাবে উদযাপন করা হয়
🍽 বিশেষ ভোজ
এই দিনে শাশুড়ি নিজের হাতে (বা অর্ডার করে) নানা পদ রান্না করেন জামাইয়ের জন্য। মেনুতে থাকে ভাত, মাছ (ইলিশ, রুই), চিংড়ি, খাসির মাংস, ডিমের কারি, ভাজা, শুক্তো, চাটনি, পাপড়, মিষ্টি দই, রসগোল্লা, সন্দেশ, আরও কত কী! জামাইয়ের পাতে সবকিছু উঠে আসে ভালোবাসার ছোঁয়ায়।
🎁 উপহার
জামাইকে নতুন পোশাক — সাধারণত ধুতি-পাঞ্জাবি বা শার্ট-প্যান্ট — এবং বিভিন্ন উপহার দেওয়া হয়। কখনো নগদ অর্থ বা শুভেচ্ছা কার্ডও দেওয়া হয় ভালোবাসার স্মারক হিসেবে।
🙏 ষষ্ঠী পূজা
শাশুড়ি ষষ্ঠী দেবীর পূজা করে জামাইয়ের মঙ্গল কামনা করেন। জামাইয়ের হাতে পবিত্র সুতোর বাঁধন (সোয়াগন্ধী) বাঁধা হয়, কপালে সিঁদুর দিয়ে চিহ্ন আঁকা হয়, আর আশীর্বাদ করা হয় যেন সে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকে।
🎊 আড্ডা ও হাসি-মজা
পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে গল্প, হাসি-মজা, আড্ডা করে। শালা-শালী, দেওর-ননদ সবাই মিলে জামাইকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করে, যা উৎসবের আনন্দ আরও বাড়িয়ে তোলে।
📷 ছবি তোলা ও ভাগ করে নেওয়া
আজকের দিনে জামাই ষষ্ঠী শুধু ঘরের চার দেওয়ালে সীমাবদ্ধ নয় — অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জামাইয়ের সঙ্গে ছবি, ভিডিও পোস্ট করে, পরিবারের গর্ব ও ভালোবাসা প্রকাশ করে।
🌼 শেষ কথা
জামাই ষষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গের এক অনন্য পারিবারিক উৎসব, যেখানে পারিবারিক বন্ধন, স্নেহ ও ঐতিহ্য একসঙ্গে মিশে যায়। এই দিনে শুধু জামাই নয়, গোটা পরিবার মিলে এক আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সম্পর্কগুলিকে আরও দৃঢ় করে রাখে।
Comments
Post a Comment